আমাকে পেতে

Follow rafee_rockz on Twitter

পৃষ্ঠা

Total Pageviews

Created By Faiad Iftikhar Rafee. Powered by Blogger.

জনকপ্রিয় পোস্ট

ভিজিটর গননা

Thursday, January 20, 2011

postheadericon দি নিউ ইচ্ছাপূরণ [রবিঠাকুরের ইচ্ছাপূরণ গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে]

সুবলচন্দ্রের ছেলে সুশীলচন্দ্রের কথা খেয়াল আছে? ওই যে, যে ছেলে পাড়াময় সবাইকে অস্থির করিয়া রাখিত। বাপ মাঝে মাঝে শাসন করিতে ছুটিতেন কিন্তু বাপের পায়ে ছিল বাত, আর সুশীল হরিণের মতো দৌড়াইতে পারিত; কাজেই কিল চড়-চাপড় সকল সময় ঠিক জায়গায় গিয়া পড়িত না।


এভাবেই নানান যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সুশীল একদিন ভাবল, আহা, আমি যদি বাবার মতো হতে পারতাম! অন্যদিকে সুবলচন্দ্র ভাবল, আহা! আমি যদি আবার ছেলের বয়সে ফিরে যেতে পারতাম! একদিন ইচ্ছাঠাকরুন তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করল। সুবল হয়ে গেল সুশীল আর সুশীল হলো সুবল। তারপর তো কত কাহিনি! সব তো বলা সম্ভব না। পড়া না থাকলে পড়ে নেবেন।

এর প্রায় কয়েক যুগ পরের ঘটনা। মেঘে মেঘে বেলাও যেমন বেড়েছে, ইচ্ছাঠাকরুনের বয়সও তেমনি কম হয়নি। রবিঠাকুরের সেই সুশীলচন্দ্রেরই ছেলের ঘরের নাতির নাতির নাতি বসবাস করে এখন ঢাকা শহরে। নাম ধ্রুব। চাকরি করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। একেবারে গাধার খাটনি খাটিয়ে নেয় তারা। তবে বেতনও সে রকমই। তাই বিয়ের বাজারে ধ্রুব বেশ দামি পাত্র হয়ে উঠল। তো, এমন হলে যা হয় আর কি! একদিন আত্মীয়স্বজনেরা মিলে ধ্রুবকে বিয়ে দিয়ে দিল। মেয়েটিও ভারি লক্ষ্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে অনার্স পাস করে বেরিয়েছে। নাম সুস্মিতা। ভালোই চলছিল সংসার। দেখতে দেখতে কয়েক বছর পার হয়ে গেল। এর মধ্যে তাদের সংসারে দুটি ফুটফুটে কন্যারও আগমন ঘটল। এমনই এক সুখের দিনে হঠাৎ ধ্রুবর মাথা বিগড়ে গেল। আমি সারা দিন অফিসে খেটে মরি আর সুস্মিতা সারা দিন বাসায় থেকে পায়ের ওপর পা তুলে খাবে, তা হবে না। সংসারে আর কী কাজ! সে নিয়ে সুস্মিতার সঙ্গে তুমুল ঝগড়াঝাটি। সেদিনই সন্ধ্যায় ধ্রুব মনে মনে ভাবল, আহা, যদি এমন হতো আমার শরীরে সুস্মিতা চলে এল আর আমি চলে গেলাম সুস্মিতার শরীরে! তাহলে সে বুঝত আমি অফিসে কী পরিশ্রমটাই না করি, আর সে বাসায় থেকে কী আরামটাই না করে!

ইচ্ছাঠাকুরন তখন সেই বাসার ছাদে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। ধ্রুবর মনের ইচ্ছা জানতে পেরে অনেক দিন পর আবার মুচকি হাসলেন।

পরদিন সকালে ধ্রুব ঘুম ভেঙে দেখে সে সুস্মিতা হয়ে গেছে। তখনই সে বিছানা ছেড়ে রান্নাঘরে গেল। সকালের নাশতা তৈরি করল, বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করল। তাদের নাশতা খাওয়াল। টিফিন বক্সে টিফিন ভরল। তাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবার বাসায় এসে স্বামীর (সুস্মিতা) জন্য চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে টেবিলে নাশতা দিল। তাকে তৈরি হতে সাহায্য করল।
স্বামী অফিসে চলে যাওয়ার একটু পরেই ফ্রিজ খুলে দেখে কোনো বাজার নেই বাসায়। প্রথমে গেল ব্যাংকে। এ মাসের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়নি। সেখানের লম্বা লাইন পেরিয়ে গেল বাজারে। মাছ বাজারের নোংরা কাদা পেরিয়ে বাজারটাজার করে সে যখন বাসায় এল তখন অলরেডি দুপুর একটা। তরকারি-মাছ কুটে দ্রুত সে দুপুরের খাবার চড়াল চুলায়। দেখতে দেখতে আড়াইটা। সে ছুটল বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে। বাসায় এনে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে দেখে বাথরুমে একগাদা কাপড় পড়ে আছে। সেগুলো ধুয়ে ছাদে নাড়তে গেল। ততক্ষণে তার শরীর আর চলছে না। কিন্তু রান্নাঘরসহ পুরো বাড়িই যে এখনো নোংরা হয়ে আছে। সেগুলো পরিষ্কার করতে করতে কোন দিক দিয়ে বিকেল হয়ে গেল টেরই পেল না। বিকেলে বাচ্চাদের জন্য একটু সবজি নুডলস বানিয়ে তাদের দিতে দিতেই স্বামী এসে হাজির। তার জন্য আবার তখনই চুলায় চায়ের পানি চড়াল। আবার রাতের খাবার রেডি করে তাদের সবাইকে খাইয়ে বিছানায় যখন এল তখন রাত এগারোটা। শরীর আর একটুও চলছে না। কোনো রকমে শরীরটা বিছানায় ছেড়ে দিল। স্বামীরূপী সুস্মিতা এইচবিওতে (ইটস নট টিভি, ইটস এইচবিও) একটা মুভি দেখছিল তখন। ধ্রুবর এই অবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। মুভি দেখা বাদ দিয়ে পরম মমতায় কাছে টেনে নিল তাকে।

পরদিন সকাল। ঘুম থেকে উঠেই আবার এত কাজের কথা মনে হতেই ধ্রুবর শরীরে জ্বর চলে এল। সে মনে মনে প্রার্থনা করা শুরু করল, যা ভেবেছিলাম ভুল ভেবেছিলাম। হে ইচ্ছাঠাকরুন, আমাকে আজই এক্ষুনি আবার আগের মতোই বানিয়ে দাও। একদিনেই আমার ভুল ভেঙে গেছে।

ইচ্ছাঠাকরুন তখন মুচকি হেসে ধ্রুবকে বললেন, ‘আমি খুব খুশি যে তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ। এবং তুমি যা চাও তা-ই হবে। তোমাকে আমি আবার আগের ধ্রুবই বানিয়ে দেব। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে। আজ এক্ষুনি তো তোমাকে আমি আবার আগের ধ্রুব বানাতে পারছি না। কালকে রাত এগারোটার আগে বললেও হতো। তোমাকে এখন দশ মাস দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে যে।’

0 মন্তব্য(সমূহ):